web development

একটি ওয়েবসাইট আমাদের কাজের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা জানি। মূলত একটি ওয়েবসাইট পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি করার জন্য যে সকল কাজ করা হয়, সহজ কথায় তাকেই ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বলা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট অথবা ইন্ট্রানেট (প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) এর জন্য যে-সব ওয়েবসাইট, সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয় এবং এগুলো তৈরির প্রক্রিয়াকে বলা হয় ওয়েব ডেভেলপমেন্ট।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে যারা কাজ করে তাদের ওয়েভ ডেভলপার বলা হয়। একজন ওয়েব ডেভলপার এর কাজের পরিমাণ অনেক ব্যাপক। একটি সাধারণ স্যাটিক ওয়েভ পেইজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম, ব্যবসায়িক শিল্প প্রতিষ্ঠান এর ই-কমার্স সাইট, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে আমরা যখন প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো সার্চ করি সাধারণত এই কাজ গুলাই ওয়েব ডেভলপমেন্ট।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ কি?

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি, যারা ওয়েভ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে তারাই ওয়েব ডেভেলপার। একজন ডেভেলপার এর কাজ হলো একটি ওয়েব সাইট তৈরি করা থেকে শুরু করে ইন্টারনেটে লাইভ করা পর্যন্ত এবং তার সিকিউরিটি প্রদান করা। আরও একভাবে বলা যেতে পারে, ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ হলো ওয়েব সাইট এবং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি এবং তাদের পরিচালনা করা।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কত প্রকার?

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন- ফ্রন্ট এন্ড,ব্যাক এন্ড ও ফুল স্ট্যাক।

  1. ফ্রন্ট এন্ডঃ আমরা যখন একটি ওয়েব সাইট ভিজিট করি, তখন তার প্রথম পেইজে আমরা কিছু নকশা, লে-আউট, ছবি, লেখা ও এর UI(ইউজার ইন্টারফেস)/UX(ইউজার এক্সপ্রেয়িন্সে) ডিজাইন দেখতে পাই। তাকে সাধারণত ওয়েব সাইট এর ফ্রন্ট এন্ড বলা হয়ে থাকে। একজন ফ্রন্ট এন্ড ওয়েব ডেভেলপারকে যখন কোনো ক্লায়েন্ট কোনো নির্দিষ্ট ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে বলেন, তখন তারা ইলাস্ট্রেটর বা ফটোশপের মাধ্যমে প্রথমে সেই ডিজাইনটি তৈরি করেন৷ অতঃপর এইচটিএমএল (HTML) ও সিএসএস (CSS) প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তারা ওয়েবসাইটের ডিজাইনটি তৈরি করে থাকেন।
  2. ব্যাক এন্ডঃ কোনো ওয়েব সাইটের ফাংশনাল কাজের জন্য সাইটের ভিতরের অংশে যে কাজ করা হয়, যেমন- ওয়েব ডিজাইন ও থিম ডিজাইন ব্যতীত, ব্যাক-এন্ড সার্ভার, ডাটাবেজ ইত্যাদিকেই ব্যাক এন্ড বলা হয়ে থাকে। ব্যাক এন্ড সাধারণত একটি স্ট্যাটিক ওয়েব পেইজ কে ডাইনামিক ওয়েব পেইজে রূপান্তরিত করে। ব্যাক এন্ড ওয়েব ডেভলপমেন্ট এর কাজ অদৃশ্য বা সার্ভার সাইটে হয়ে থাকে তাই ভিজিটররা দেখতে পান না। এগুলো মূলত ওয়েবসাইটের ভিতর থেকে ম্যানেজমেন্ট বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এদের মধ্যে ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অন্যতম।
  3. ফুল স্ট্যাকঃ একটি ওয়েব সাইট ডিজাইন করা থেকে শুরু করে ওয়েব সাইট এর সম্পূর্ণ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজ করার প্রক্রিয়াই হলো ফুল স্ট্যাক ডেভলপমেন্ট। অর্থাৎ ওয়েব ডিজাইন, ফ্রন্ট এন্ড, ব্যাক এন্ড, ওয়েব সাইটের সার্ভার, গঠন ও কাঠামো তৈরি করাই হলো একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপারের কাজ। ডিবাগিং, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সিকিউরিটি সব কিছুই একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভলপার ম্যানেজ করে থাকে। ই-কমার্স ওয়েব সাইট গুলো একজন ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভলপার সম্পাদন করে থাকে।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখতে কি কি জানতে হবে?

আমরা মূলত এখন জানি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর কাজ কী? কিভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়? এই কাজ গুলা করার জন্য একজন ওয়েব ডেভলপার এর কিছু দক্ষতা থাকা দরকার। এই দক্ষতার মধ্যে অন্যতম হলো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। এই বিষয় গুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ-

  • HTML: HTML (Hyper Text Markup Language) এর মার্ক আপ ট্যাগ সমূহ ব্যবহার করে ওয়েবপেজ এর বেসিক কাঠামো তৈরি করা হয়। কোনো ওয়েবসাইট, ইউজার বা ব্যবহারকারীর সামনে কীভাবে প্রদর্শিত হবে তা HTML কোডিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রথমেই আপনাকে ওয়েবসাইটটির একটি গঠন তৈরি করতে হবে, যার জন্য সর্বপ্রথমেই আপনাকে HTML কোডিং শিখতে হবে।
  • CSS: CSS (Cascoding Style Sheets) কোনো ওয়েবসাইটের গঠন তৈরি হওয়ার পর সেই ওয়েবসাইটটির ডিজাইন, কালার বা রং, আউটলুক ইত্যাদি তৈরি করার জন্য সিএসএস ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয়।
  • Javascript: জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে ওয়েবসাইটের ইন্টারআ্যকটিভিটি বাড়াতে হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আপনার সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, টুইটার) কেউ একজন লাইক বা কমেন্ট করলো, এর নটিফিকেশন আপনার প্রোফাইলে আসলো, এই আসার প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করে জাভাস্ক্রিপ্ট। এছাড়া আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের স্লাইড শো, ই-মেইল ফর্ম, লগ ইনফর্ম তৈরি করার জন্য জাভাস্ক্রিপ্ট জানতে হবে।
  • PHP: PHP (Hypertext Preprocessor) হচ্ছে এক ধরণের সার্ভার সাইড স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ। ওয়েবসাইটকে ইউনিক করে তোলার জন্য পিএইচপি খুবই কার্যকরী। বিশ্বের বেশিরভাগ বড় বড় ওয়েবসাইটই PHP’র উপর নির্ভরশীল। যেমন : ফেসবুক। PHP এর কাজ হলো ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি বৃদ্ধির করা।
  • WordPress: ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে বিশ্বের জনপ্রিয় CMS (Content Management System)। ওয়ার্ডপ্রেস একটি সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম যেটা ব্যবহার করে আপনি কোনো কোডিং ছাড়াই একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পারবেন। WordPress ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইট বানাতে চাইলে আমাদের এই কোর্সটি করতে পারেন। এখানে ক্লিক করুন

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে আয় করার উপায়ঃ

একজন ওয়েব ডেভেলপার নিজের মেধা খাটিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। তারমধ্যে নিম্নে একজন ওয়েব ডেভেলপারের জব সেক্টর নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ-

  • পার্মানেন্ট জবঃ আপনি যদি একজন দক্ষ মানের ওয়েব ডেভেলপার হয়ে থাকেন, বিভিন্ন আইটি কোম্পানিতে আপনার চাকরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে তাদের ই-কমার্স সাইটের জন্য ডেভেলপার নিয়োগ দিয়ে থাকে। ওয়েভ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আপনি দক্ষ হতে পারলে দেশের বাইরে গিয়ে বিদেশেও চাকরির সুযোগ রয়েছে।
  • ফ্রিল্যান্সিংঃ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখলে আপনার কাজের সুযোগ অনলাইন ও অফলাইন সবজায়গায় রয়েছে। একজন পারদর্শী ওয়েব ডেভেলপার এর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসে অনেক ডিমান্ড থাকে। আপনি যদি fiverr, upwork , freelancing.com মার্কেট প্লেসে আপনার পোর্টফলিও বা গিগ আপলোড দিয়ে আপনি আপনার দক্ষতা তাদের দেখাতে পারবেন, এখান থেকে আপনি ঘরে বসেই অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
  • পার্টটাইম জবঃ প্রতিটি ওয়েবসাইট দেখাশোনার জন্য একজন ওয়েব ডেভেলপার এর দরকার পড়ে। আপনার যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর সামান্য ধারণাও থাকে, তাহলে পার্ট টাইম জব হিসেবে আপনি এই কাজটি করতে পারেন।
  • ওয়েবসাইট বিক্রয়ঃ ধরুন আপনি একজন ওয়েব ডেভলোপার হয়ে নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করলেন। কিছুদিন এই ওয়েবসাইটটিতে কাজ করে এটিকে পপুলার করে তা পরবর্তীতে বিভিন্ন কোম্পানিকে ভালো দামে সেল করে দিতে পারেন। এই বিজনেসটি অনেকেই করে থাকে। বর্তমানে অনলাইন ওয়েব সাইট বিক্রির জন্য অনেক প্লাটফর্ম আছে যেখানে আপনি চাইলেই একটি ওয়েবসাইট বিক্রি করতে পারবেন। ওয়েব সাইট বিক্রির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট হচ্ছে flippa.com
  • স্পনসরশিপঃ আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে, এবং তাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিজিটর থাকে। তাহলে এই ভিজিটর দেখিয়ে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে স্পনসরশিপ নিতে পারেন। মানে হচ্ছে, কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন গুলো আপনার ওয়েবসাইটে বসাবেন। এর বিনিময়ে কোম্পানি থেকে আপনি বেশ কিছু টাকা উপার্যন করতে পারবেন।

কীভাবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখবেন?

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী, কত প্রকার, কীভাবে আপনি একজন সফল ওয়েব ডেভেলপার হবেন এই বিষয়গুলো আমরা জানলাম। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট আমরা শিখবো কীভাবে?

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখার সহজ কয়েকটি উপায় রয়েছে। সেগুলো হলোঃ-

  • আমাদের ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে।
  • ইউটিউবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট টিউটোরিয়াল দেখে।
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ব্লগ পড়ে।
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ভিত্তিক বই পড়ে।
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ভিত্তিক ই-বুক(E-Book) বা পিডিএফ(PDF) পড়ে।

কেন আমাদের কাছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখবেন?

একজন ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে ফ্রিলান্সিং জগতে আমাদের রয়েছে ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা! আমরা পৃথীবির প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে দক্ষতার সাথে কাজ করেছি।

ফেসবুকে Freelancing Help নামে আমাদের একটি গ্রুপ আছে। যেখানে শত শত মানুষকে আমরা হাতে কলমে ফ্রিলান্সিং শিখাচ্ছি। আমরা কখনোই আপনাকে ফ্রিলান্সিং শিখিয়েই ছেড়ে দিবো না। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে ইনকাম শুরু করার আগ পর্যন্ত আপনাকে শিখিয়েই যাবো। আমাদের রয়েছে ডেডিকেটেড ফ্রিলাংসিং টিম। আপনি কোথাও সমস্যায় পরলে সারাজীবন আমাদের কাছ থেকে সাপোর্ট পাবেন।

তাই আমাদের কাছে জীবন পরিবর্তনকারি কোর্সটি করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

1 comment on “ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কী? কেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখবেন?

  1. অসাধারণ একটি পোষ্ট! ওয়েব ডেভেলপমেন্ট নিয়ে অনেক কিছুই জানা হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *